বাংলাদেশ সরকার দেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি তেলের চাহিদাপূরণ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে "ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন" প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এর পক্ষে ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেড (ইআরএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল এবং এইচএসডি সহজে, নিরাপদে, স্বল্প খরচে এবং স্বল্পতম সময়ে মাদার ভেসেল হতে খালাস নিশ্চিত করা যাবে। ক্রুড অয়েল ও ডিজেল ট্যাংক স্থাপনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও যোগানের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা যাবে।
শীর্ষক প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকার এবং চীন সরকারের মধ্যে জি টু জি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় মহেশখালি দ্বীপের পশ্চিমে (বঙ্গোপসাগরে) একটি এসপিএম তথা ভাসমান জেটি ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পের সম্পূর্ণ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মহেশখালীতে প্রকল্পের পাম্পিং স্টেশন ও ট্যাংক ফার্ম (পিএসটিএফ) এলাকায় ৬টি স্টোরেজ ট্যাংক এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মহেশখালীর ধলঘাটায় একটি এবং চট্টগ্রামের গহিরা ও ডাঙ্গারচরে দুইটি ব্লক ভালভ স্টেশন এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মাইক্রোয়েভ রিলে টাওয়ারের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের টেস্টিং ও কমিশনিং এর অংশ হিসেবে ক্রুড ও ডিজেল অয়েলের First filling সম্পন্ন হয়েছে। বঙ্গেপসাগরে স্থাপিত এসপিএম বয়ার মাধ্যমে ক্রুড ও ডিজেল অয়েলের চালান খালাস সম্পন্ন হয়েছে এবং মহেশখালিতে স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংকসমূহে রাখা হয়েছে। স্টোরেজ ট্যাংকসমূহ হতে ক্রুড অয়েল এবং ডিজেল পাম্পিং করে ইআরএল-এ প্রেরণের মাধ্যমে প্রকল্পের মূল কমিশনিং সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত পটভূমিঃ
ইআরএল বিপিসি-র আওতাধীন একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এবং দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম অয়েল রিফাইনারী। বর্তমানে ইআরএল এর বাৎসরিক ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা ১.৫ মিলিয়ন মে.টন। বর্তমানে দেশে জ্বালানি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রতিবছর প্রায় ৪.৫ মিঃ মে. টন এইচএসডি আমদানী করার প্রয়োজন হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্যতা কম (৮-১৪ মি:) হওয়ায় মাদার অয়েল ট্যাঙ্কারগুলো সরাসরি খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে মাদার অয়েল ট্যাঙ্কারগুলো গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করে ছোট ছোট লাইটারেজ ভেসেল এর মাধ্যমে ক্রুড অয়েল খালাস করা হয়। এভাবে ১১ দিনে একটি ১০০,০০০ ডিডব্লিউটি ট্যাঙ্কার খালাস করা হয়। বর্তমানে ইআরএল এর বাৎসরিক ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা ১.৫ মিলিয়ন মে.টন। প্রস্তাবিত ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ইআরএল এর বাৎসরিক ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৪.৫ মিলিয়ন মে.টন। বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করে লাইটারেজ পদ্ধতিতে তেল খালাস করা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল এবং ভবিষ্যৎ চাহিদার বিবেচনায় ও বাস্তবতার নিরিখে সম্ভবপর হবে না। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে লাইটারেজ-এর মাধ্যমে পরিবহণ খরচ ও অপচয়সহ প্রতি বছর সরকারের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য
প্রকল্পের পরামর্শকঃ ILF Consulting Engineers, Germany প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে।
প্রকল্পের ইপিসি ঠিকাদারঃ জি টু জি ভিত্তিতে China Petroleum Pipeline Engineering Co., Ltd (CPPEC) প্রকল্পের ইপিসি ঠিকাদার হিসেবে নিয়োজিত হয়েছে।
প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তাঃ চায়না এক্সিম ব্যাংক।
প্রকল্পের এসপিএম এর বৈশিষ্ট্যাবলী :
এসপিএম এর ধরণ : Catenary Anchor Leg Mooring(CALM), Double Flow Path
বাৎসরিক আনলোডিং ক্ষমতা : মোট ৯.০ মিলিয়ন মে. টন
আনলোডিং সময় : ১,২০,০০০ ডিডব্লিউটি ক্রুড অয়েল ট্যাংকার = ৪৮ ঘন্টা
৭০,০০০ ডিডব্লিউটি ডিজেল ট্যাংকার = ২৮ ঘন্টা
প্রকল্পটির প্রধান প্রধান কার্যক্রমঃ
১) এসপিএম, পিএলইএম স্থাপন, ২) মোট অফশোর ও অনশোর পাইপলাইন = ২২০ কিঃ মিঃ, ৩) এইচডিডি ক্রসিং, (৪) মহেশখালী এলাকায় স্টোরেজ ট্যাংক ও পাম্পিং স্টেশন স্থাপন: ৩ টি ক্রুড অয়েল (প্রতিটির নেট ধারণক্ষমতা ৫০,০০০ ঘঃ মিঃ) ও ৩টি ডিজেল ট্যাংক (প্রতিটির নেট ধারণক্ষমতা ৩০,০০০ ঘঃ মিঃ), প্রধান পাম্প, বুষ্টার পাম্প, জেনারেটর, স্কাডা, কাস্টডি মিটারিং স্টেশন, পিগিং স্টেশন, সিকিউরিটি সিস্টেম, অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাদি। ৪) ৩টি ব্লক ভাল্ভ স্টেশন ও ১টি মাইক্রোওয়েভ রিলে স্টেশন, ৫) পাইপলাইন টার্মিনাল ফ্যাসিলিটিজ ।